ক্রীড়া ডেস্ক :
ঢাকা, ৬ আগস্ট : ছয় বছর পর দেশের বাইরে এবং তিন বছর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সোমবার শেষ টি-টোয়েন্টিতে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯ রানে হারিয়ে সাকিব আল হাসানের দল সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশ দাপট দেখাল। প্রমাণ করল সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ ভিন্ন কন্ডিশনে, অচেনা উইকেটে যেকোনো প্রতিপক্ষকে হারাতে পারে। রঙিন পোশাকে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জানান দিল ভালোভাবেই।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশে পেয়েছিল উড়ন্ত সূচনা। মাঝে প্রতিরোধ গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিকের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ১৮৪ রানের পুঁজি পায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
বোলিংয়ে শুরু থেকেই দ্যুতি ছড়াতে থাকেন বোলাররা। পেস, স্পিনারদের সম্মিলিত আক্রমণে লক্ষ্য নাগালের বাইরে চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’-আন্দ্রে রাসেল ভয় দেখিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু নিজেদের দিনে বাংলাদেশ হার মানেনি। ১৩৫ রানে থামে ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ জিতে নেয় ম্যাচ। কিন্তু ওখান থেকে ফিরে আসা কঠিন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। ১৭ বলে লাগত ৫০ রান। ছিল না প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যাটসম্যান। বৃষ্টি বাগড়া না দিলে পরাজয়ের ব্যবধান আরো বেড়ে যেত!
ফ্লোরিডার লডারহিলে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি সাকিব। ধীরগতির উইকেট। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য আদর্শ। নিজেদের পছন্দের উইকেট পেয়ে ঝড় তোলেন লিটন ও তামিম। লিটন ও তামিম যে ঝড় তুলেছিলেন, তা দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা।
২২ বলে বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে ফিফটি, বাংলাদেশের দ্রুততম দলীয় ফিফটি। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ১৭, ১২ ও ১৯ করে রান। বাংলাদেশের রানের চাকায় লাগাম টানার জন্য দরকার ছিল উদ্বোধনী জুটি ভাঙা। দলের হয়ে কাজটা করেন কার্লোস ব্রাফেট। ক্যারিবীয় অধিনায়কের স্লোয়ারে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন ১৩ বলে ২১ রান করা তামিম। তিনে নেমে সৌম্য শুরুটা ভালো করেছিলেন। প্রথম বলে হাঁকিয়েছিলেন বাউন্ডারি। কিন্তু ওখানেই সবশেষ সৌম্যর।
৪ বলে ৫ রান করে কিমো পলের স্লোয়ারে লং অনে ক্যাচ দেন। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা সৌম্য আরেকবার ব্যর্থ। ক্রিকেটটা যেন ভুলতেই বসেছেন সৌম্য সরকার! ব্যাটে রান নেই। শরীরী ভাষাতেও নেই আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে লিটন ছিলেন দুর্দান্ত। সঙ্গী হারানোর পরও পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশকে ৭১ রান এনে দেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। যেখানে তার অবদান ১৭ বলে ৪৫।
তবে শুরু যতটা ভালো করেছিলেন, সেই ধার ধরে রাখতে পারেননি লিটন। ২৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটির স্বাদ পান। দলীয় ১০২ রানে যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন তার রান ৩২ বলে ৬১। অথচ প্রথম ১৬ বলে লিটন করেছিলেন ৪৪ রান, পরের ১৬ বলে ১৭ রান। সব মিলিয়ে ৩২ বলে ৬১ রান করেন লিটন। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান।
লিটন সাজঘরে ফেরার আগে মুশফিক ব্রাফেটের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৪ বলে ১২ রান করে। পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। তাদের ৪৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশ আবার লড়াইয়ে ফিরে আসে। ১৬তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন পল। ডানহাতি এ পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা সাকিব।
বড় পুঁজির জন্য প্রয়োজন ছিল সেট ব্যাটসম্যানের শেষ পর্যন্ত খেলা। দায়িত্বটা নিজ কাঁধে নেন মাহমুদউল্লাহ। সঙ্গে আরিফুল দারুণ সঙ্গ দেন। দুজন ২৫ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন। বাংলাদেশ শেষ ৩ ওভারে পায় ৩৩ রান। তাতেই রানের চূড়ায় উঠে যায় সফরকারীরা। ২০ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। আরিফুল ১৬ বলে করেন ১৮ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন ব্রাফেট ও পল। ১ উইকেট নেন কেসরিক উইলিয়ামস।
লক্ষ্য তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায়নি ঝোড়ো সূচনা। বাংলাদেশ যেখানে পাওয়ার প্লে’তে ৭১ রান তুলেছিল, সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান মাত্র ৩২। উইকেটও হারায় ৩টি। শুরুতে দ্রুতগতিতে রান না তোলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আসকিং রানরেট। ওই রান আর তাড়া করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা।
নিষ্প্রাণ লক্ষ্য তাড়ায় প্রাণ এনেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। ২১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে ভয় দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু মুস্তাফিজ তাকে ফেরানোর পর সবশেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ছক্কা দিয়ে রানের খাতা খোলা রাসেল ২৪ রান করেন চার ছক্কায়। এরপর চার। শুরুর ২৮ রানই তোলেন বাউন্ডারিতে। ৪৭ রানের ইনিংসে ৪০ রানই আসে বাউন্ডারিতে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন রোভমান পাওয়েল, ২১ রান আসে দিনেশ রামদিনের ব্যাট থেকে। বল হাতে মুস্তাফিজ ৩১ রানে নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন সাকিব, আবু হায়দার, রনি সৌম্য ও রুবেল হোসেন। মাত্র ৩ বল করে ছিটকে যান নাজমুল ইসলাম। হাতে চাদউইক ওয়ালটনের বুটের আঘাত পাওয়ায় মাঠ ছাড়েন বাঁহাতি স্পিনার।
ফ্লোরিডায় ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল লিটন-ঝড়ে। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও ওঠে তার হাতে। ম্যাচের শেষটা রাসেল-ঝড়ে। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসতে পারেননি রাসেল। তার বিদায়ের পর ফ্লোরিডার আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি। যে বৃষ্টিতে আনন্দ উৎসব করে বাংলাদেশ। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জয় তো চাট্টিখানি কথা না!
বাংলাদেশের সিরিজ জয়
