বিশেষ প্রতিনিধি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ চার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ২৩ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা। পদপ্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়েছেন। কার্যালয়গুলোতে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের এসব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনোটির দ্বি-বার্ষিক আবার কোনোটির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, সংগঠনগুলোর দুই বা তিন বছর মেয়াদি কমিটিগুলো দ্বিগুণেরও বেশি সময় পার করেছে। কোনও কোনোটির সম্মেলন হতে যুগও পার হতে দেখা গেছে। দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া কোনোটারই নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সম্মেলন করার নজীর নেই।
মূলত নেতাদের পদ আঁকড়ে রাখার প্রবণতা এবং পদ হারালে মূল দল আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনও সংগঠনে জায়গা না পাওয়ার আশঙ্কায় সংগঠনগুলোর বর্তমান নেতৃত্ব সম্মেলন করতে চান না। বিশেষ করে দল ক্ষমতায় থাকলে এই ধরনের পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। সম্মেলন করতে অনাগ্রহী এসব সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এবারও তাই হয়েছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মেয়াদোত্তীর্ণ চার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর এখন প্রতিদিন বিকাল হলেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অফিস উত্সবমুখর হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী অনেকেই কোণঠাসা ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীসহ নিজ নিজ বলয়ে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছেন তারা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আড্ডা ও শোডাউন দিতে শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। এছাড়া এত দিন সংগঠনগুলোর যেসব নেতাকর্মী শীর্ষ নেতাদের সুনজর কাড়তে সঙ্গম হননি, তারাও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন জমজমাট। দুই অফিসের সামনে টানানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন নেতাদের সঙ্গে কেউ কেউ যোগাযোগ করছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুনজর পেতে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন অনেকে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে নেতাকর্মীদের খুব বেশি উপস্থিতি দেখা যায়নি যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তবে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরদিনই জমজমাট হতে শুরু করে যুবলীগের অফিস। শুক্রবার যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় যুবলীগ নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল চোখের পড়ার মতো।
সম্মেলন সামনে রেখে যুবলীগের মতো স্বেচ্ছাসেবক লীগ অফিসেও ভিড় অনেক বেড়েছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল এই অফিসে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় যোগ্য অনেক নেতাই কোণঠাসা হয়ে আছেন। সম্মেলনের আভাস পেয়ে তাদের তত্পরতাও বেড়েছে।