এপিপি বাংলা : বরিশালের প্রথম করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসার পর তাকে প্রধান অতিথি করে ত্রাণের চাল বিতরণ করেছেন জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল বারী মনির। আয়োজকরা জানান, জনগণের মধ্যে করোনা ভীতি কাটাতে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। তবে এর মধ্য দিয়ে ওই ব্যক্তিসহ অন্যরা ঝুঁকিতে পড়লেন বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন।
বুধবার দুপুরে চরগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় করোনা জয়ী একই ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের আব্দুর রব মুন্সীকে (৫০)। যিনি বরিশালের প্রথম করোনা আক্রান্ত দুইজনের একজন ছিলেন। তিনি শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২২ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি ফেরেন।
বুধবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে দেড়শ’ হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করেন চরগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির। করোনাজয়ী আব্দুর রবকে দেখতে কয়েকশ’ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ভিড় করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আব্দুর রব মুন্সী বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে আক্রান্ত সবাই সুস্থ হতে পারেন। এ ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। যার যার ধর্মানুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবেন।’
চরগোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল বারী মনির বলেন, স্থানীয় কাজীরচর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রব মুন্সী পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থাকেন। লকডাউনের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রব মুন্সী একা গ্রামে এসে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হন। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে গত ৮ এপ্রিল রব মুন্সী শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে ভর্তি হন। ১২ এপ্রিল বরিশালে প্রথমবারের মতো শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন দুই রোগীর দেহে করোনা শনাক্ত হয়। যার মধ্যে রব মুন্সী একজন। হাসপাতালের আইসোলেশনে ২২ দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফেরেন।
অনুষ্ঠানের অতিথি লেঙ্গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘রব মুন্সীকে জনসম্মুখে আনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি অনেকটাই দূর হয়েছে এবং অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। এই অনুষ্ঠানের কারণে করোনা জয়ী রব মুন্সী ও তার পরিবারের সদস্যদের এখন আর কেউ এড়িয়ে চলবে না এবং তারা হেয়প্রতিপন্ন হবে না।’
এ ব্যাপারে বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। কারণ সুস্থ হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে আমরা ছাড়পত্রে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়টি লিখে দেই। মেহেন্দীগঞ্জে যা করা হয়েছে তা রোগীর সুস্থ হওয়ার ১৪ দিন পর করলে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু রোগী ও যারা এ অনুষ্ঠানটি করেছেন তাদের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার।’
করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিকে প্রধান অতিথি করে ত্রাণ বিতরণ!
