ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার এই সানিটা জাতীয় এথলেট স্বর্ণ বালক ও বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স এ ২০০ মিটারের পোষ্টার বয় (Saiful Saney) সাইফুল ইসমাইল খান সানির খেলোয়াড়ি জীবনের চলমান সংক্ষিপ্ত গল্প।
সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের সূর্যকান্দি গ্রামের খান বাড়ীর সন্তান প্রচার বিমুখ এক কিশোরের নাম মোঃ সাইফুল ইসমাইল খান সানি। স্থানীয়ভাবে কেবল কাছের মানুষ ছাড়া তাকে তেমন কেউ চিনেনা। এলাকার ছেলে হলেও ছোট বেলা থেকেই সে রাজধানী ঢাকাতে পড়ালেখা আর খেলাধুলা নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করেছে। মাঝে মধ্যে ছুটি পেলে গ্রামের বাড়ীতে দুয়েক দিনের জন্যে আসলেও সে তার গ্রামের পরিবেশ, চারপাশটাকে ঠিকমতো ঘুরে দেখতে পারে না।
সানি মা-বাবার অতি আদরের সন্তান বলেই তাকে তার মা-বাবা চোখের আড়াল হতে দেন না। সানির বাবা ইসমাইল খান, তিনি একজন ব্যবসায়ী। আর মা রানু বেগম হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। সানির একমাত্র বড় ভাই রাইসুল ইসমাইল খান, সাবেক প্রফেশনাল ফুটবলার। খেলেছে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে এবং বর্তমানে ঢাকায় সিটি ব্যাংকে চাকরি করে। মা-বাবা আর ভাইকে নিয়ে সানিদের চার সদস্যের পরিবারটি যেনো একটি সুখী পরিবার।
সানি প্রাথমিক লেখাপড়া করে তার গ্রামের সূর্যকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর স্থানীয় কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে। তারপর ২০১১ সালে সানি ঢাকায় ক্রীড়া বিষয়ক স্কুল বিকেএসপিতে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়। আর ২০১৮ সালে সানি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করে। সানি মূলতঃ একজন এথলেট ক্রীড়াবিদ। এথলেট স্প্রিন্টার হিসেবে সানি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম কিশোর। সানির আইডল বাংলাদেশের প্রয়াত দ্রুততম মানব মাহবুব এবং আমেরিকার এথলেট জাস্টিন গেটলিন। সানির স্বপ্ন সে একদিন বিশ্বমানের একজন বড় এথলেট স্প্রিন্টার হবে এবং দেশ ও এলাকার নাম উজ্জল করবে।
★সানি এই পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে ও পুরস্কার অর্জন করেছে তার তথ্য নিম্নে লেখা হলোঃ-
২০১২ সালে জাতীয় জুনিয়র মিট এথলেটিক্সে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে জীবনের ১ম স্বর্ণপদক অর্জন করে। এরপর আর তাকে পিছু তাকাতে হয়নি। একের পর এক রেকর্ড সহ অনেক স্বর্ণপদক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে অর্জন করে। ২০১৩ সালে জাতীয় জুনিয়র মিট এথলেটিক্সে ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে ব্যক্তিগত এবং ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক অর্জন করে। একই সালে ভরতে অনুষ্ঠিত জুনিয়র সাউথ এশিয়ান গেমসে ব্যক্তিগত ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে ৩য় স্থান লাভ করে। ২০১৪ সালে জাতীয় জুনিয়র মিট এথলেটিক্সে ব্যক্তিগত ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে। ২০১৫ সালে জাতীয় জুনিয়র মিট এথলেটিক্সে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে এবং রেকর্ড সহ বাংলাদেশের দ্রুততম কিশোর উপাধি লাভ করে। ২০১৫ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র ইয়ুথ চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় ৪২টি দেশের মাঝে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ৪র্থ হয়। ২০১৬ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশীপে ব্যক্তিগত ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ৬ষ্ট হয়। আবার ২০১৬ সালে জাতীয় সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সিলভার পদক পায়। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ান সাফ গেমসে ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে যথাক্রমে ৪র্থ হয়। ২০১৭ সালে জাতীয় সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপে ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে। ২০১৭ সালে চীনে অনুষ্ঠিত জুনিয়র ওয়ার্ল্ড এথলেটিক্সে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেমিফাইনাল খেলে। ২০১৮ সালে জাতীয় এথলেটিক্সে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সিলভার পদক, ৪০০*১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক, ২০১৮ সালে জাতীয় সামার মিট ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক, ৪*১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক, ৪*৪০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক, ২০১৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ সাউথ এশিয়ান গেমসে ফাইনালে ষষ্ঠ হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় ইন্টার সার্ভিসে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে। ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে বাংলাদেশীদের মধ্যে দ্বিতীয় রেকর্ড টাইমিং করে। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে রেকর্ড সহ স্বর্ণপদক, ৪*৪০০ মিটারে স্বর্ণপদক, ৪*১০০ মিটারে স্বর্ণপদক অর্জন করে।
মাত্র বাইশ বছর বয়সের কিশোর সানি এতোসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক পুরস্কার অর্জন করেও প্রচারহীনভাবেই যেনো সবার চোখের আড়ালে রয়ে গেছে। সরাইলে সানির মতো এমন প্রতিভাবান এথলেট দ্বিতীয়টি আর নেই। সরাইলের গর্ব ও কৃতি সন্তান সানি। সরাইল উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সানিকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।
সানি তার জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে আরও সম্মান দেশের জন্য বয়ে আনুক এবং সানির জন্মভূমি সরাইলের নাম উজ্জ্বল করুক এই দোয়া এবং প্রত্যাশা আর শুভ কামনা করি!
মুল লেখক
রওশন আলী
২৭/০১/২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
পুন এডিট
মোঃ রাইসুল ইসমাইল খান