প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জে এস ডি’র সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন।
করোনা মহামারীর তান্ডবে বিশ্বের শীর্ষ দশের বাংলাদেশে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন সংক্রমণের হার বাড়ছে, সাথে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। মহামারী করোনার এই দুর্যোগময় প্রেক্ষাপটে জাতীয় বাজেট উত্থাপিত হলেও মানুষের জীবন সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়নি। করোনা জনস্বাস্থ্যের যে ঝুঁকি তৈরি করেছে সে বিবেচনায় ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কোন পরিকল্পনা না করে প্রমানিত অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমলাতন্ত্রের কাছেই থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটা জনজীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার প্রণোদনারই নামান্তর। করোনার অভিঘাত বা ছোবল মানুষের জীবন ও অর্থনীতিতে কি ধরনের আঘাত হেনেছে বা অদূর ভবিষ্যতে কি ধরনের আঘাত হানবে তার কোন কিছুই বাজেট পরিকল্পনায় পরিলক্ষিত হয়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই, নেই কোন অগ্রাধিকার।
বিশাল বাজেটের বিশাল বরাদ্দ দেখে মনে হচ্ছে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে, করোনা যেন এখন অতীতের বিষয়। বাজেটে সম্পদ আহরণ এবং সম্পদ ব্যয়ের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তাতে মনে হয় করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার কোন ছোঁয়া লাগেনি। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। বাজেটে জীবন ও জীবিকা সুরক্ষার চেয়ে সরকারের আত্মম্ভরিতার প্রতিফলন ঘটেছে বেশী।
বলাবাহুল্য, এবারের এই বিশাল বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে উন্নয়ন চমকের আড়ালে সরকার তার বৈধতার সংকট কাটানোর নিছক প্রয়াস নিচ্ছে মাত্র।
করোনা মন্দার কারণে সারাবিশ্ব জর্জরিত। তারপরও উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি আর উচ্চাভিলাষী বাজেট নিয়ে সরকারের দৌড়ঝাঁপের প্রয়াস ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ও সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায়।
করোনার কারণে সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য যে ধরনের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন ছিল তার কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি বাজটে।
জীবন ও জীবিকার সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে পদক্ষেপ নিতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অসংখ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার আজ পর্যন্ত কোন জাতীয় সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করতে পারেনি। আর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনই তো তাদের বিবেচনায় অবান্তর। এসব আত্মঘাতী পদক্ষেপের জন্য জাতিকে উচ্চ মূল্যের খেসারত দিতে হচ্ছে এবং হবে।
দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ লন্ডভন্ড। দুর্নীতি অদক্ষতা সমন্বয়হীনতায় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় পচন ধরেছে। গত চার মাসে মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরবার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও এই ভঙ্গুর দুর্নীতিগ্রস্ত অদক্ষ স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনরকম সংস্কার না করে শুধুমাত্র থোক বরাদ্দ দিয়ে সতের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করার ঘোষণা তামাশারই নামান্তর। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫/৩৭ শতাংশ দরিদ্র সীমার নিচে চলে এসেছে, এদের কর্মসংস্থানের কোন নির্দেশনা বাজেটে নেই।
বিপদজ্জনক বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার পরও আয় বৈষম্য কমানোর কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। গুটিকয়েক মানুষ অতি ধনী আর বিশাল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করবে এটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে দুর্নীতি অপচয় বন্ধ না হলে বেকারত্ব, দারিদ্র ও বৈষম্য বাড়বে। তাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় উপনিবেশিক কাঠামোর সংস্কার প্রশ্নেও কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
প্রিয় বন্ধুরা,
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সারা বিশ্ব বড় ধরনের খাদ্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অর্থনীতিতে আরো বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে।
কোভিড ১৯ মহামারীতে সামাজিক সুরক্ষা, করোনায় আক্রান্তদের সনাক্তকরণ,কন্টাক্ট ট্রেসিং ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী স্থানীয় সরকারের অভাবে বিরাট সংকট দেখা দিচ্ছে। এসব বিষয়ে সরকার উদাসীন।
বাজেটের পূর্বে আমরা ১০ দফা দাবী উত্থাপন করেছিলাম। এখন বিরাজমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি:
১.মানুষের জীবন বাঁচাতে জরুরী ভিত্তিতে “জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল” (National Health Council-NHC) গঠন করতে হবে। ২. জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলের পরামর্শমত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে জাতীয় সমন্বিত কৌশল প্রনয়ণ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। ঔষধের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। ৩.অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি, শিক্ষা, পরিবেশ, ক্ষুদ্র শিল্পে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি ও প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে। ৪. শিক্ষিত বেকার, কর্মক্ষম যুবক, হত দরিদ্র কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প ও বিদেশ থেকে ফেরত প্রবাসীদের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করতে হবে। ৫. গার্মেন্টসসহ সকল শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে ও জীবন সুরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ৬. কোটি কোটি বেকার ও নিরন্ন মানুষের হাহাকারকে উপহাসকারী মেগা প্রজেক্ট এর সীমাহীন দুর্নীতি, অপচয় বন্ধ করতে হবে। ৭. বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ খাদ্য সংকটের প্রেক্ষিতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ৮.নিউজ প্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক কমানো, অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারসহ সংবাদপত্র শিল্পকে প্রণোদনা দিতে হবে। ৯. উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠন করতে হবে। ১০. সামাজিক ব্যবসা ও মাইক্রোক্রেডিট ব্যাপক হারে চালু করতে হবে।
করোনার দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক সংকটে সারা জাতি চরম উদ্বিগ্ন। এই মহাসঙ্কটে সমাজের সকল অংশিজনকে সম্পৃক্ত করে নতুন শক্তির উন্মেষ ঘটাতে হবে। যাতে মানুষ উদ্বেগ এবং হতাশা থেকে মুক্ত হয়ে সংকটের এই লগ্নে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় ঐক্য স্থাপন করতে পারে।
সরকারের কল্পিত উন্নয়নের আকাশছোঁয়া অভিযাত্রা এক করোনা সংকটেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু এরপরও সরকার কোন শিক্ষা নিচ্ছে না, যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
আসুন করোনার অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানুষ বাঁচানোর এবং অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা জাতীয় ভাবে গ্রহণ করি।
সাংবাদিক বন্ধুরা, আমাদের বক্তব্য আপনাদের মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপনের সূযোগ দিয়ে কৃতার্থ করবেন।
মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে অন্যান্য সম্মুখ যোদ্ধাদের মত সংবাদ সংগ্রহের এই বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য আপনাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করছি।
আ স ম আবদুর রব
সভাপতি
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি
প্রেস বিজ্ঞপ্তি