এপিপি বাংলা : ১০ই মহররম শুধু কারবালার ইতিহাস নয় তার সাথে জড়িয়ে আছে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আছে বলে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর আলোচনায় বক্তব্য তুলে ধরেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের উদ্যোগে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি নিজাম উদ্দিন আল আদনানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাহমুদের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সদ্যবিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা সুহাইল আহমদ। আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্র জমিয়তের অন্যতম সহসভাপতি হাফেজ আহমদ ইসলামাবাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত আল মিসবাহ, পাঠাগার সম্পাদক শামিম আহমদ, সহ সাহিত্য সম্পাদক সাদ অামীর, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলনা সুহাইল অাহমদ বলেন, ১০ই মহররম শুধু কারবালা নয় তার সাথে জড়িয়ে আছে আরো অনেক ইতিহাস এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক তাৎপর্যময় ও গুরুত্ববহ দিন। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর পবিত্র আশুরা পালিত হয়। ৬৮০ খ্রি. মোতাবেক ৬১ হিজরির এই দিনে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণ করেন। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল।
ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তার আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগের মহিমা মুসলিম উম্মাহ্র এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং অসত্য ও অন্যায় প্রতিরোধে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর এ ভূমিকায় মানবজীবনের জন্য বিরাট একটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার আগেও এ দিনে নানা তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। পাষণ্ড ইয়াজিদ বাহিনীর সৈন্যদের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথিসহ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতবরণের এ মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও এই দিনে পৃথিবীতে অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে।
বর্ণিত আছে, ১. আল্লাহ্তায়ালা আকাশ-জমিন-পাহাড়-পর্বতসহ সব পৃথিবী এ দিনে সৃষ্টি করেন। ২. আদি মানব হজরত আদম (আ.) এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন, এই দিনই তার তওবা কবুল করা হয় এবং এ দিনে তিনি স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৩. হজরত ইউনুছ (আ.) এই দিনে ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে আল্লাহ্র রহমতে মুক্তি লাভ করেন। ৪. এই দিনই হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়ে তুরস্কের জুদি নামক পর্বতে নোঙর করেন। ৫. হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের প্রজ্বালিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর সেখান থেকে ১০ মহররম মুক্তি লাভ করেন। ৬. দীর্ঘ ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগের পর হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করেন। ৭. হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) তার ১১ ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে কূপে পতিত হন এবং পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর ১০ মহররম তারিখে পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৮. হজরত মুসা (আ.) এই দিনে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেন এবং অভিশপ্ত ফেরাউনকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। ৯. এই দিনে হজরত ইসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং তার জাতির লোকরা তাকে হত্যাচেষ্টা করলে আল্লাহপাক তাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে মুক্তিদান করেন। ১০. কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.) পরিবার-পরিজনসহ শাহাদতবরণ করেন। এ ছাড়া হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নিজাম উদ্দিন আল আদনান বলেন, কারবালার ইতিহাস থেকে আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদেরকে কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করা যাবেনা। কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করে সেই সংগ্রামী চেতনা ধারণ করে অন্যায়, অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।