Tuesday, October 3, 2023
Home > আঞ্চলিক সংবাদ > ভেড়ামারায় আবু জাহেদ’র তৈরি শরবতের চাহিদা বেড়েই চলেছে

ভেড়ামারায় আবু জাহেদ’র তৈরি শরবতের চাহিদা বেড়েই চলেছে

আবু ওবাইদা-আল-মাহাদী:
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌর এলাকায় বাবর আলী সুপার মার্কেটের ১নং সিঁড়ির নিচে শরবত তৈরির বিভিন্ন গাছান্ত বনাজী সামগ্রী নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় শরবত বিক্রেতা মোঃ আবু জাহেদকে। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত্রি ১০ টা পর্যন্ত সেখানে বসেই শরবত বিক্রি করেন তিনি। ভেড়ামারা থানার ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের পূত্র মোঃ আবু জাহেদ (৩৮)। প্রায় ২ যুগ ধরে গাছান্ত বনাজী শরবত বিক্রি করে আসছেন তিনি। শরবত বিক্রেতা আবু জাহেদ ও শরবত পান করতে আসা বিভিন্ন জনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এই বনাজী শরবত পান করে শরীরের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এর মধ্যে জন্ডিস, ক্লান্তিদুর, লিভার, প্রসাব পরিস্কার, শরীর কসা, প্রসাবের জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা এবং যৌন উপকারিতাসহ শরীরের বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায়। বনাজী শরবতের জনপ্রিয়তা থাকলেও শীতের মৌসুম থেকে গরমের মৌসুমে মানুষের কাছে এর চাহিদা বেশি। প্রতিদিন এ শরবত পান করে শারীরিক বিভিন্ন রোগের উপকারিতা পাচ্ছেন মানুষজন। আর এই বনাজী শরবত তৈরি হয় এলোেেব্ররা, শিমুলের মূল, উলট কমল, বেল, হরতকি, আমলকি, ইউসুবগুলের ভুসি, তোকমা দানা, আখের গুড়, তাল মাখানা, শাহী দানাসহ বিভিন্ন বনাজী জিনিস দিয়ে।
শাহিন পোল্ট্রি হ্যাচারী’র মালিক মোঃ শাহিনুর রহমান জানান, এসব শরবত শরীরের বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায় বলে অনেকেই সেখানে গিয়ে শরবত পান করেন। এভাবেই দিনের পর দিন মানুষজনের কাছে আবু জাহেদ এর বনাজী শরবত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রায় দুই যুগ আগে আবু জাহেদ সিদ্ধান্ত নেন ঔষধি গাছের শরবতের দোকান দেয়ার। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু ঔষধি গাছ এনে ভেড়ামারায় গাছান্ত শরবত বিক্রি শুরু করেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আবু জাহেদ এর দেখাদেখি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অন্তত ১০ থেকে ১২টি গাছান্ত শরবতের দোকান তৈরি হয়েছে। তারাও আজ স্বাবলম্বী।
শরবত খেতে আসা ডাঃ মোঃ রাসেল আহম্মেদ, হেলাল, ই¯্রাফিল, সেতু, সুমনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিয়মিত এ শরবত খেয়ে আসছেন। এ পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি। রিকশাচালক আবদুল্লাহ বলেন, ২০ টাকা দামের এক গ্লাস কবিরাজি শরবত খাইলে শরীরে ক্লান্তি থাকে না, রাতে ভালো ঘুম হয় ও খাবারে রুচি বাড়ে। এতে এলোেেব্ররা (ঘৃত কুমার) উলট কমল, ফ্রিজ পানি, তোকমা দানা, ইউসুবগুলের ভুসি, সোনা পাতা, বেলশুট, অর্জুন ছাল, বাবলার ছাল, হরতকী, বহেরা, আমলকী, সিন্দুক লবণ ও তাল মাহানাসহ ২১ রকমের মজা দেয়া আছে, এক গ্লাস মাত্র ২০ টাকা। ২০ থেকে ৩০ টাকার ডাব এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফলে আবু জাহেদ এর শরবত খেয়েই তৃষ্ণা মেটায় অনেকেই।
এভাবে মাস চলতে আপনার কষ্ট হয় না? জানতে চাইলে আবু জাহেদ বলেন, অনেক কষ্ট তো হয়ই, কিন্তু কী করবো বলেন? আমার তো পূঁজি নাই। লেবুর শরবত ১০, বেলের শরবত ১৫ ও কবিরাজী শরবত ২০ টাকা। এভাবেই শরবত বিক্রি করে চলতে হয়। তার ওপর যেখানে বসি তার ভাড়া ও কারেন্ট বিল দিতে হয়। মাঝে মধ্যে আবহাওয়া খারাপ থাকলে কামাই বন্ধ। এদিকে সন্তান বড় হচ্ছে, সংসারে ১ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রী আছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি আমি। পরিবারের সুখের জন্য একটু বেশ কষ্টতো করায় লাগবে। গরম সৃজনে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়, আর শীতকালে ৮’শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। এসব বনাজী শরবত খেতে প্রতিদিনই তার কাছে যান বিভিন্ন মহলের মানুষজন। এভাবেই দিন দিন মানুষের কাছে চাহিদা বেড়ে চলেছে আবু জাহেদ এর বনাজী শরবত।
এ বিষয়ে ইনডিজিনাস মেডিকেল হলের মালিক কবিরাজ মোঃ শরিফুজ্জামান বলেন, গাছান্ত শরবতে যেসব গাছ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মানব দেহের জন্য অতি উপকারী, তবে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি ও ব্যবহার করলে পেটের পীড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Like & Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *