ক্রীড়া ডেস্ক :
দুবাই: অসাধারণ! দুর্দান্ত! আর কী বলা যায় এই জয়কে? স্নায়ুযুদ্ধের এই খেলায় বাংলাদেশ যে জিতবে, তা কল্পনা করা কঠিন ছিল যে কারো পক্ষে। শেষ ওভারে মাত্র ৮ রান দরকার ছিল আফগানদের। হাতে উইকেট ছিল ৪টি। কিন্তু সেই সহজ কাজটাই অসাধ্য করে দিলেন মোস্তাফিজ। অসাধারণ শেষ ওভারে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ৩ রানের এক নান্দনিক জয়।
এশিয়া কাপের টানটান উত্তেজনার এ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানেরা মধ্য দিয়ে ফাইনালের আশাও বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। সেই জয় নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছসিত দলের অধিনায়ক মাশরাফি। জানালেন মোস্তাফিজের কৃতিত্বের কথা, ‘আসলে যেভাবে আমরা জিতেছি তার কৃতিত্বটা অবশ্যই মোস্তাফিজের। সে ছিল জাদুকর। তার নিজস্ব জাদুতে বের করে এনেছে আমাদের জয়। সে যেভাবে বল করেছে তা এক কথায় অসাধারণ।’
পাশপাশি বললেন সাকিব আল হাসানের কথাও, ‘সাকিব যেভাবে শেষ তিন ওভারে বল করেছে তা আমাদের জন্য ইতিবাচক ছিল। আর ও যে উইকেটটা নিয়েছিল তা শেষ দিকে আমাদের জন্য ভাইটাল হয়ে দাঁড়ায়।’ দলের ব্যাটসম্যানদের প্রতিও জানালেন কৃতজ্ঞতা, মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুলের প্রশংসা করতেই হবে। তারা চাপের মুখেও দলকে ভালো স্কোরের দিকে নিয়ে গেছে।
আর পাকিস্তানের সাথে জয়ের বিষয়ে জানালেন আশাবাদ, ‘আসলে পরপর অনেকগুলো ম্যাচ হওয়ায় আমরা বেশ প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছি। তার উপর পাকিস্তানের সাথে খেলাটা সহজ হবেনা। তবে এ ম্যাচের জয়ে আমরা যে আতœবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি তা সামনের ম্যাচে ভালো খেলতে খুব সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশের দেয়া ২৫০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ম্যাচটা সহজ হয়নি আফগানদের। তবে লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ভালো খেলতে থাকে তারা । তবে মোস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অসাধারণ জয় পায় টাইগাররা। সর্বোচ্চ ৭১ রান করেন হাশমতউল্রাহ। বাংলাদেশের পক্ষে ৬২ রানে ২ উইকেট লাভ করেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
২৫০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই চাপের মধ্যে ছিল আফগানিস্তান। দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। মোস্তাফিজের বলে দলীয় ২০ রানে সাজঘরে ফেরেন ইহসানউল্লাহ। এরপর সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রান আউট হয়ে মাত্র ১ রান করে বিদায় নেন রহমত শাহ। ফলে দলীয় ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানরা।
এরপর ভালো জুটি গড়েন শেহজাদ ও হাশমতউল্লাহ শাহিদি। এই দুজনের ৬৩ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে আফগানরা। এরপর আসগর আফগানের সাথে ৭৮ রানের আরেকটি জুটি গড়েন হাশমতউল্লাহ। মাশরাফির বলে আসগর ও হাশমতউল্রাহর বিদায়ের পর আশা জাগে টাইগার শিবিরে। ৯৯ বলে ৭১ রান করেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। এরপর শিনওয়ারি ও মোহাম্মাদ নবীর ব্যাটিংয়ে দ্রুত এগোতে থাকে আফগানিস্তান। সাকিবের বলে শেষদিকে ৩৮ রান করে নবী প্যাভিলিয়নে ফিরলে কিছুটা আশা জাগে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান। মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারে থেকে সে রান তুলতে ব্যর্থ হয় আফগানরা। উল্টো আউট হন রশিদ খান। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৪ রান। কিন্তু মোস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে কোনো রানই নিতে পারেননি শিনওয়ারি।
এর আগে আফগানদের বিপক্ষে মাহুমুদুল্লাহ ও ইমরুল কায়েসের ব্যাটে ভর করে ২৫০ রানের বড় টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ দলের পক্ষে সবের্োচ্চ ৭৪ রান করেন। এছাড়া অপরাজিত ৭২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন ইমরুল কায়েস। এই দুজনের ১২৮ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত্তি খুঁজে পায় টাইগাররা। আফগানদের পক্ষে ৫৪ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন আফতাব আলম।
এদিন আরো একবার ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। ৮৭ রানে সাজঘরে ফেরেন টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান। ওপেনার নাজমুল ইসলাম শান্ত আরো একবার ব্যর্থ হয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করতে। তিনি যখন আফতাবের বলে নিজের ৬ রানে ফিরে যান দলের রান তখন ৫ ওভারে ১৬।
এর পরের ওভারে দলীয় ১৮ রানে ফিরে যান মোহাম্মদ মিথুন। সাকিব কিংবা ইমরুলকে অনডাউনে না নামিয়ে এ ম্যাচে নামিয়ে দেওয়া হয় মিথুনকে। মুজিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর লিটন ও মুশফিকের জুটিতে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। রশিদের স্পিনে ভেঙ্গে যায় তাদের ৬৩ রানের জুটি। ৪১ রান করেছেন লিটন।
এরপর সাকিব নেমেই হয়েছেন রান আউট। শূণ্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। একটু পর একই ভুল করে বসেন মুশফিক। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় অনর্থক রান নিতে গিয়ে নিজের উইকেট উপহার দেন আফগানদের। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। এরপর মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৪৯ রান সংগ্রহ বাংলাদেশ।
শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের পর যা বললেন মাশরাফি
