Thursday, September 28, 2023
Home > জাতীয় সংবাদ > বিদেশী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার শর্তাবলী প্রকাশের আহ্বান টিআইবির

বিদেশী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার শর্তাবলী প্রকাশের আহ্বান টিআইবির

এপিপি বাংলা :ভারত, চীন ও জাপানকে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেয়ার যথার্থতা স্বত্ত্বেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট শর্তাবলি নির্ধারণ ও প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

জাতীয় স্বার্থের সর্বোচ্চ প্রাধান্য বিবেচনায় এধরনের উদ্যোগের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী প্রত্যাশিত ফলাফল এবং বিশেষ করে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই কেবল অগ্রসর হবার জন্য সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, সম্প্রতি ভারত, চীন ও জাপানকে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। যার যৌক্তিকতা ও সময়োপযোগিতা বিতর্কের উর্ধ্বে; কিন্তু এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার শর্তাবলী কী, এতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের কতখানি লাভ হবে, একইভাবে এধরণের উদ্যোগের ঝুঁকিগুলোই বা কী, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কী ধরণের শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং তার যথাযথ পরিবেশগত সমীক্ষার শর্তাবলী কী, মুনাফার বন্টন কীভাবে হবে?- এ বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানকার স্থানিক প্রভাব যাচাই করা হয়েছে কিনা, কিংবা হয়ে থাকলেও তাতে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা কতখানি বা এর ফলে তাদের জীবন-জীবিকার উপর কী প্রভাব পড়বে সেটিও স্পষ্ট নয়। এসব বিষয়ের পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে আমরা উদ্বিগ্ন।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন এইজন্য যে, যেদেশে ভূমিসম্পদ নির্দ্বিধায় অন্যতম দুষ্প্রাপ্য সম্পদ, সে দেশে একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে কৃষিযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে উল্লিখিত বিষয়গুলোর বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ না করেই কৃষি ও পতিত জমি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগ রাষ্ট্রের জন্য কতটা লাভজনক বা এই সম্পদের বিকল্প ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে কিনা, তা নির্ধারণে যথাযথ সমীক্ষা এবং এসব অঞ্চলে কি ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে সেটিও স্পষ্ট নয়। তাই আমরা এসব তথ্য প্রকাশ করার দাবি করছি। আর যদি উল্লিখিত বিষয়গুলো, বিশেষ করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির বিশ্লেষণমূলক সমীক্ষা ছাড়াই এসব চুক্তি হয়ে থাকে তাহলে অবিলম্বে তা স্থগিত করে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে যথাযথ পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও স্থানিক প্রভাব সমীক্ষার উপর নির্ভর করে অগ্রসর হবার জন্য জোর দাবি জানাই।’
জাপানের ক্ষেত্রে মোটাদাগে বাংলাদেশের প্রাপ্য অংশ নির্ধারিত হলেও এখনো চীন ও ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অংশীদারীত্বের কোন প্রকার রূপরেখা নির্ধারিত হয়নি জেনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. জামান আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মিরসরাইয়ে ভারতের জন্য বরাদ্দ দেয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলটি উন্নয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতের ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপকে, যারা ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত। এই ধরণের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু বিবেচিত হয়েছে তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে চীনের আগ্রাসী বিনিয়োগ কৌশলের নেতিবাচক প্রভাবের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় না নিয়ে চীনের মতো দেশের সাথে এ ধরণের উদ্যোগ অপরিনামদর্শী হবে বলেও আমরা মনে করি।’

Like & Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *