এপিপি বাংলাা : ক্যারিয়ারের চাকা চলতে চলতে কোথায় গিয়ে থামবে? আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের লেগ স্পিনার হিসেবে ক্যারিয়ারটা কত দীর্ঘ হবে? এই ব্যাটসম্যান কাম লেগব্রেক বোলার কতদিন জাতীয় দলের হয়ে সার্ভিস দিতে পারবেন? এমন কৌতুহলি প্রশ্নের উত্তর দেব সময়।
তবে এখনকার খবর, ২০ বছরের এ সাহসী যুবার লেগস্পিনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা ভাল হয়েছে। অনেকেরই মত প্রত্যাশার চেয়ে ভাল করেছেন লেগ স্পিনার বিপ্লব।
শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৪.৫০ রান দিয়ে ১৮ রানে ২ উইকেট দখল করার মঝে তার বোলিং ফিগারটাকে বেঁধে রাখা যাবে না। মোটকথা, শুধু পরিসংখ্যান আর অংক দিয়ে নয়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে বিপ্লবের বোলিংটা নানা হিসেব নিকেশে সর্ব মহলেই হয়েছে প্রশংসিত।
সবাই বলেছেন, বাহ ছেলেটার লেগ স্পিন বোলিংয়ে প্রথম দিনই মিললো বেশ সম্ভাবনার ঝিলিক। লেগ স্পিনার হিসেবে এতবড় মঞ্চে আগে কখনো বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকার পরও বুধবার তার বল করার সাহস, ভাল করার দৃঢ় সংকল্প, মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধি খাটিয়ে ভাল লাইন ও সমীহ জাগানিয়া লেন্থে বল ফেলা এবং বাড়তি কিছু না করে বেসিক মেনে, ৪ ওভার প্রায় একই লেন্থে বল করে যাওয়া- সবার নজর কেড়েছে । প্রশংসাও পেয়েছে।
কেমন ছিল সে অভিজ্ঞতা? ভিতরে অনুভব ও উপলব্ধিটাই বা কেমন? আজ দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতে চট্টগ্রামের টিম হোটেল ‘রেডিসন ব্লু’র লবিতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে নিজের অনুভুতির কথা জানাতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব স্বীকার করেন, পুরো বিষয়টি তার কাছে একদম স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। জাতীয় দলে খেলার আশা ও স্বপ্ন ছিল; কিন্তু এত শিগগির এবং এভাবে তার সে স্বপ্ন পূরণ হবে, তা ভাবেননি আগে।
তাইতো মুখে এমন কথা, ‘আসলে সবার একটা স্বপ্ন থাকে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলার। আমারও ছিল সে স্বপ্ন।’ তা পূর্ণ হওয়ায় অন্যরকম ভাল লাগায় আচ্ছন্ন দেহমন। সেটা জানিয়ে বিপ্লব বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছিল যে আমি খেলছি। ছোট বেলা থেকে যাদের খেলা দেখে আসছি তাদের সঙ্গে খেলতে পারা অনেক আনন্দের, সুখের আর গর্বের।’
এখন অনেক ভাল লাগায় আচ্ছন্ন হলেও আমিনুল বিপ্লবও ম্যাচ শুরুর আগে অনেক নার্ভাস ছিলেন। সবার সামনে এত বড় মঞ্চে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলাই অনেক বড় টেনসনের। তারওপর লেগস্পিনার হিসেবে- যেটা তার মূল কাজ নয়। ভিতরে নানা চিন্তা এসে বাসা বেধেছিল। কিছু ভয়-ডরও এসে ভর করছিল; কিন্তু অধিনায়ক সাকিব আর সিনিয়র খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সাহস জোগানোয় সব ভয়, ডর আর টেনসন নিমিষেই কেটে যায় বিপ্লবের।
তা জানিয়ে এই লেগি বলে ওঠেন, ‘ম্যাচের শুরুর দিকে আমি একটু নার্ভাস ছিলাম; কিন্তু যখন সাকিব ভাই আর রিয়াদ ভাইয়ের মতো এতো অভিজ্ঞ মানুষ সাপোর্ট করেন, পাশে দাঁড়ান এবং বলেন- কিরে ভয় পেয়েছিলি নাকি? নাহ! ভয়-ডরের কিছুই নেই। ডোন্ট অরি- তখন অটোমেটিক আত্মবিশ্বাস চলে আসে। আমি শুধু ওটাকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছি।’
বোলিং শুরুর আগের আড়ষ্টতাও কমে যায় এবং ভাল বোলিংয়ের অনুপ্রেরণা এবং সাহসও সঞ্চার হয় সাকিব এবং রিয়াদের উদ্দীপক কথা ও সু-পরামর্শে।
সাংবাদিকদের সে কথা জানাতেও ভুল হয়নি বিপ্লবের, ‘আমি যখন বোলিংয়ে যাই তখন একটু ইয়ে… (নার্ভাস) ছিলাম। সাকিব ভাই আমাকে বলল, তুই নরম্যাল যেভাবে বোলিং করিস সেভাবে বোলিং করার চেষ্টা কর। আর রিয়াদ ভাই বলছিল, ভালো জায়গায় বোলিং করলেই হবে। সেগুলো করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো হয়েছে।’
এর বাইরে ভাল জায়গায় বল ফেলার তাড়াটাও দিয়েছিলেন সাকিব ও রিয়াদ। ‘সাকিব ভাই ও রিয়াদ ভাই আমাকে একটা কথাই বলছিলেন, শোন, লেগ স্পিনার হিসেবে শুধু জায়গায় বল করলেই হবে। তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব। আমিও মনে মনে স্থির করে ফেলি শুধু ভালো জায়গায় বল করবো আর ব্যাটসম্যানকে রিড করে ডেলিভারি দেবো। ইনশাআল্লাহ তাহলেই হবে।’