Wednesday, December 6, 2023
Home > আঞ্চলিক সংবাদ > প্রখর রৌদ্রে তিন ঘন্টা শ্রমের টাকায় আখাউড়ার চিকিৎসকদের জন্য উপহার দিলেন প্রবাসী

প্রখর রৌদ্রে তিন ঘন্টা শ্রমের টাকায় আখাউড়ার চিকিৎসকদের জন্য উপহার দিলেন প্রবাসী

 

মাইনুদ্দীন রুবেল : রক্তদান আর সামাজিক কাজ ছিল (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) প্রবাসীর নেশা। মানবিক মনের মানুষটি জীবন সংগ্রামে প্রবাসে। ভাগ্য বদলে সর্বশেষ মাস ছয়েক আগে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যে। সেখানে গিয়েই পড়েন বিপত্তিতে। করোনার থাবা যে বিশ্বময়। এরই প্রভাবে মাস দুয়েক হয় কাজ নেই। ঘরেই বসা। ৮ বাই ৮ একটা কক্ষে থাকেন ১০ জন। অন্য প্রবাসীদের মতো কষ্টে দিন কাটছে তাঁরও। প্রবাসে এই বৈরী পরিবেশের কষ্টটা অসহনীয়। এর মাঝেও প্রবাসীর কষ্ট দেশকে নিয়ে। দেশের মানুষ আর মানুষদের সেবায় নিয়োজিত বীরদের নিয়ে। নিজের কাজ না থাকলেও তাঁর কষ্ট দেশে এই সময়ে খদ্য কষ্টে থাকা মানুষদের নিয়ে।

রক্তদানকারী সংগঠনের সমন্বয়ক সমীর চত্রুবর্তী বলেন, বুধবার ভোররাত ৩টায় ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে রিং দেন প্রবাসী। মোবাইলে হ্যালো বলতেই অপরপ্রান্ত থেকে প্রবাসীর মায়াভরা কণ্ঠ। তখনও সমীর চত্রুবর্তী বুঝতে পারছি না কি ঘটতে চলেছে।
সংগ্রামী মানুষটি রক্ত দিয়ে মানবিক সংগঠন আত্মীয়ের সাথে আগে থেকেই যুক্ত। বর্তমান কাজগুলোর তথ্য পাচ্ছেন ফেসবুকে। সম্প্রতি তিনি জেনেছেন আখাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সারাদিন কাজ ছাড়াও মোবাইলফোনে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সেই চিকিৎসকদের মনোবল ধরে রাখতে আত্মীয়ের কাজগুলোও জেনে গেছেন প্রবাসী। চিকিৎসকদের জন্য আত্মীয় কি করছে? বিনয়ের সঙ্গে তার এই কথায় জানালাম- আত্মীয় তাদের প্রাণশক্তি বাড়াতে কয়দিন পরপরই উপহার হিসেবে ফল, দুধসহ নানা খাবার দিচ্ছে। এবার থমকে যায় প্রবাসীর সুর। তার হাত খালি। তারপরও সংগ্রামী প্রবাসীর মন কিছু করতে চাইছে। সেই তাড়না থেকেই তপ্ত রৌদ, উনুনের মতো গরম বাতাসে ঘন্টা তিনেক কাজ করে হাতে উঠে বাংলাদেশি কিছু টাকা। এই কারণেই এত রাতে ফোন দেওয়া। আত্মীয়ের পক্ষে তাকে বুঝানো হলো আপাতত টাকার দরকার নেই। এই টাকাটা এখন প্রবাসী যেন নিজের জন্য খরচ করেন। যখন কাজ শুরু হবে তখন দেখা যাবে। নাছোড় মানুষটির পাল্টা প্রশ্ন, এই করোনাকালে যদি না বাঁচি। তাহলে আমার হয়ে কৃতজ্ঞতা জানানোর তো কেউ নেই! তাদের উপহার দেয়ার নিয়তেই তো তপ্ত বাতাস, আর কাটফাটা রৌদকে উপেক্ষা করেছি। টাকাটা রুজি করেছি। এটা আপনাকে গ্রহণ করতেই হবে। আমার ইচ্ছা এই টাকায় করোনাযোদ্ধা বীর চিকিৎসকদের জন্য কয়েকটা ফল কিনে দিবেন। সমীর চত্রুবর্তী আরো জানান, প্রবাসীর শেষ রাতের এমন ফোন কলে বিরক্তিভাব থাকলেও আলাপের পর আর ঘুমাতে পারলাম না। যে মানুষটা নিজেই এই সময়ে দারুন কষ্টে যিনি নিজেই অনিশ্চয়তায়। তিনি কি না, ঘাম ঝড়ানো কষ্ট করেছেন শুধু চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে। আর দেশে আরাম আয়েশে খেয়ে আমরা কিভাবে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসাকর্মীদের বাসায় ঢিল ছুড়ি। তাদের চিকিৎসায় সন্দেহ করি। চিকিৎসক বলে বাড়ির মালিক ঘর ছাড়তে বলে। কোথাও আবার তালপাতার ঝুপড়িতে ঠাঁই হয় স্বাস্থ্যকর্মীর। করোনাযোদ্ধা বীরদের প্রতি প্রবাসীদের এমন কৃতজ্ঞতা আমাদের সাহস দিচ্ছে। মনের জোড় বাড়াচ্ছে। তার কাছ থেকে পাওয়া প্রেরণাই বলছে এই যুদ্ধে জয়ী হবে বাংলাদেশ- জয় হবে মানবতার। প্রবাসীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আত্মীয়ও বলছে হে বীর যোদ্ধাগণ আমরা কৃতজ্ঞ

প্রবাসীর টাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় চিকিৎসকসদের উপহার তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাসেদুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: শ্যামল চন্দ্র ভৌমিক, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: শুভ্রজিৎ রায়, সিনিয়র সাংবাদিক দুলাল ঘোষ, আত্মীয়ের প্রধান সমন্বয়ক সমীর চক্রবর্তী, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন বেগ, সুজন সাহা, এমদাত কিবরীয়া, সুদীপ্ত সাহা প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *