এপিপি বাংলা : প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। এরই মধ্যে ১২০০ ছাড়িয়েছে প্রাণহানি। মৃত্যু তালিকায় আছেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। আছেন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিক, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী। তাদের বেশিরভাগই ষাটোর্ধ।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু ১৮ মার্চ। এরপর থেকে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন মারা যান ১৫ এপ্রিল। তিনিই প্রথম চিকিৎসক, যিনি করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এরপর ২৮ এপ্রিল মারা যান সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন। দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সদস্য ছাড়াও ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ছিলেন তিনি।
মাস না ঘুরতেই ৩ মে মারা যান হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিফ হেমোটোলজিস্ট ছিলেন।
৭ মে মারা যান ফারইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. নাজমুল করিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক কাজ করেছেন ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকেও।
১০ মে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবিরও মারা যান করোনা আক্রান্ত হয়ে। বিএনপির সাবেক এ নেতা জামালপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
১৪ মে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। স্বাধীনতা ও একুশে পদক পাওয়া এ শিক্ষাবিদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে ছিলো তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ।
১৫ মে মারা যান নৃত্যশিল্পী হাসান ইমাম। টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক এ সভাপতি নৃত্য পরিচালনাও করতেন। মে মাসের ২২ তারিখ মারা যান দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম। গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই তিনি। এছাড়াও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড পরিচালক এবং চেমন ইস্পাত লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
একই দিন মৃত্যু হয় জাতীয় তথ্য কমিশনের সচিব তৌফিকুল আলমের। বিসিএস অষ্টম ব্যাচের এই কর্মকর্তা এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পিআরএলে ছিলেন।
মে মাসের ২৪ তারিখ মারা যান রাজনীতিবীদ মকবুল হোসেন, যিনি হাজী মকবুল নামেই পরিচিত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এই রাজনীতিক ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি ও শমরিতা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
২৬ মে মারা যান এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের রেফারি হুমায়ুন কবীর জুয়েল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন তিনি।
৩১ মে করোনা কেড়ে নেয় রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব বজলুল করিম চৌধুরীর প্রাণ। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মে মাসের শেষ দিন আরো মারা যান এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ। বিটিভির উপমহাপরিচালক হিসেবে কাজ করা মোস্তফা কামাল স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
১২ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সিকদার উইমেনস মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ কে এম ফজলুল হকের মৃত্যু হয়। একই দিন করোনায় মারা যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গাজী জহির হাসান এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ার।
১৩ জুন করোনায় মারা যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছয়বারের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল তিনি মৃত্যুবরন করেন। একই দিন রাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। মৃত্যুর পর তার করোনা শনাক্ত হয়।
১৫ জুন করোনা আক্রান্ত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মারা গেছেন। ভোর রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।