এপিপি বাংলা : তিরিশ বছরের নুসরাত জাহান রুহি। খাঁটি কালকেশিয়ান। মানে খোদ কলকাতা তার রক্তে। কুইন্স অফ মিশনারি স্কুলে পার করেন শৈশব আর কৈশোর। ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে কাটে যৌবনের উদ্দামতা। অনির্বচনীয় রূপ, পেলব তনু আর পানপাতার মতো মুখের আকর্ষণ ছিল সীমাহীন। শাহজাহান রুহি আর সুষমা খাতুনের মেয়েকে একবার চোখের দেখা দেখবার জন্য ছেলের দল বাইক নিয়ে হামলে পড়তো ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির সামনে। এর জন্য পড়াশোনায় কোনো ব্যাঘাত হয়নি নুসরাতের।
বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর। এরই মাঝে মডেলিংয়ে নামডাক। মিস কলকাতা হওয়া। পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর নজরে পড়তে দেরি হয়নি। শত্রু ছবিতে ফিল্মে আত্মপ্রকাশ নুসরাত জাহান রুহির। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি নুসরাতকে। কিছুদিনের মধ্যেই বাংলা ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা, তখন থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নুসরাত। পার্ক স্ট্রিটের নাইট ক্লাব ধর্ষণ কাণ্ডে যে কাদের খানের নাম জড়ালো সে নুসরাতের বয়ফ্রেন্ড। নুসরাত অবশ্য ধর্ষণের ঘটনার পর কাদেরের সংশ্রব ছিন্ন করে। কিন্তু কাদের ফেরার থাকার সময় নুসরাত তার পাটনা যাওয়ার টিকিটের ব্যবস্থা করে বলে গুঞ্জন ওঠে। নুসরাতকে গ্রেপ্তার করার দাবিও তখন উঠেছিল। এরপর নুসরাত ক্রমশ পেজ থ্রি গার্ল হয়ে ওঠে। গ্ল্যামার দুনিয়ার প্রতিভূ হয়। দু’হাজার আঠারোতে ব্যবসায়ী নিখিল জৈন-এর সঙ্গে কোর্টশিপ শুরু নুসরাতের। দু’হাজার উনিশে বিয়ে। বিয়ের পর মাথায় সিঁদুর, গলায় মঙ্গল সূত্র পরা নিয়ে কট্টরপন্থিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের বক্তব্য, একজন মুসলিম তরুণী কেন হিন্দু ধর্মাচরণ করবে? দু’হাজার উনিশে দুর্গাপুজোর সিঁদুর খেলায় অংশ নিয়ে দেওবন্দের মুসলিম ধর্মযাজকদের রোষে পড়েন নুসরাত। তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে দেওবন্দ। এই সময় নুসরাতের পাশে দাঁড়ান আর এক সাংসদ মিমি চক্রবর্তী, কংগ্রেসের অভিষেক মানু সিঙ্ঘভি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরিফ মোহাম্মদ খান। বিজেপি এন আর সি প্রয়োগ করতে এলে তাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করার কথা বলে নুসরাত কম বিতর্কিত হননি। এবার আবার মহালয়ার দিনে দুর্গা দুর্গতিনাশিনী রূপে ইনস্টাগ্রামে আবির্ভূত হয়ে নুসরাত বিতর্ক তুলে দিয়েছেন। একনাগাড়ে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন নুসরাত। নুসরাত নিজে কি বলছেন? বলছেন, তিনি সংকীর্ণ ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চান না। মানবতায় তিনি বিশ্বাস করেন। তার কাছে, হিউম্যানিটি সবার উপরে। নুসরাত এই বিশ্বাস নিয়েই জীবন কাটাতে চান। দু’হাজার উনিশের ১৩ই মার্চ যখন মুখ্যমন্ত্রী নুসরাতকে বসিরহাটকেন্দ্রে দাঁড়াতে বলেন তখন সকলে অবাক হলেও নুসরাত হননি। দিদি যে মনোনীত করেছিলেন তাতেই তার মনে হয়েছিল, অনেক কিছু পাওয়া হয়ে গেছে। এখন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করতে চান।