Wednesday, May 24, 2023
Home > আন্তর্জাতিক > জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি

এপিপি বাংলা : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হিসেবে এবারই প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে একটি সঙ্কল্প গ্রহণ (রেজুলেশন) করেছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ নভেম্বর) জাতিসংঘে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক সঙ্কল্প গ্রহণকালে প্রদত্ত বক্তৃতায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এ কথা বলেন। সঙ্কল্প গ্রহণের বিষয়টি যৌথভাবে উত্থাপন করে ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদান এবং জাতীয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, রেজুলেশনটিতে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কক্সবাজারের অত্যন্ত জনাকীর্ণ আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর এবং এ লক্ষ্যে এখানে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ করেছে তারও স্বীকৃতি দেওয়া হয় রেজুলেশনটিতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়।

রেজুলেশনটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং পহেলা ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটের মতো বিষয়গুলোর প্রতি। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সব মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে এবারের রেজুলেশনে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়ার ওপর রেজুলেশনটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

এতে মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও এর কার্যকর বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনটিতে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যাবাসনের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের হতাশা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে; যা এ অঞ্চলে নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে মর্মে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, আশা করা যায় এবারের রেজুলেশনটি নিজভূমি মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে; যা দীর্ঘস্থায়ী এ সমস্যার টেকসই সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এবারের রেজুলেশনটিতে ১০৭টি দেশ সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে- যে সংখ্যা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি ছাড়াও রেজুলেশনটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ সমর্থন জুগিয়েছে এবং সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে।

সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এবারের রোহিঙ্গা রেজুলেশনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের রেজুলেশন গৃহীত হলো; যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে- যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছেন।

Like & Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *